ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় গৃহবধূ ইলমা জামানকে নির্মম ভাবে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা’র অভিযোগের মামলায় স্বামী কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১টায় উপজেলার টগরবন্দর ইউনিয়নের কুমুরতিয়া গ্রামের তার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ। বুধবার ওই থানা থেকে তাকে ফরিদপুর আদালতে প্রেরণ করছে।
গ্রেপ্তার হলেন উপজেলার টগরবন্দর ইউনিয়নের কুমুরতিয়া গ্রামের কুবাদ শেখের ছেলে স্বপন শেখ (৩৮) ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সেলিম রেজা বলেন, গতকাল রাতে কুমুরতিয়া গ্রামে আসামি স্বপন শেখের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে ফরিদপুর আদালতে প্রেরণ করছে।
ভুক্তভোগী ইলমার পরিবার, থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বরাশুর গ্রামের মোঃ ইকরামুজ্জামান ইয়ার মোল্যা’র মেয়ে ইলমা জামান (২৩) সঙ্গে ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গা উপজেলার কুমুরতিয়া গ্রামের কুবাদ শেখের ছেলে স্বপন শেখ (৩৮) সঙ্গে ২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ হয়। এই দম্পত্তির দুই বছর দুই মাস বয়সী মেহেরীমা নামে এক কন্যা সন্তান আছে।
ইলমা’র পারিবারিক অবস্থা বেশি ভালো না হওয়ায় সত্বেও ইলমাকে শারীরিক ও মানসিক নিযাতন করে। চাপ দিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে নগদ টাকা, আসসাবপত্রসহ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার যৌতুক আদায় করে স্বপন শেখ ও তার পরিবারের লোকজন। আরও লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে স্বপন শেখ ও তার পরিবারের লোকজন। চাহিদামত যৌতুক না পেয়ে গত ২০২২ সালের মে মাসের ৪ তারিখে ইলমাকে শারীরিক নির্যাতন করে রক্তাক্ত অবস্থায় ইলমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় স্বপন শেখ ও তার পরিবারের লোকজন।
এই ঘটনার ৬ মাস পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতি সালিশ-বৈঠক মাধ্যমে উভয় পক্ষের মাঝে নিষ্পত্তি হয়। এ সালিশ-বৈঠকে স্বপন শেখ ও তার পরিবারের লোকজন পুনরায় কোনো যৌতুক দাবি করবে না ও ইলমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে পারবেন না এই শর্তে ইলমাকে পুনরায় স্বপন শেখ ও তার পরিবারের লোকজন কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য ইলমা’র ওপর পুনরায় আবার শারীরিক নির্যাতন করা শুরু তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
ইলমা’র পরিবারের পক্ষ থেকে আর যৌতুক দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়। চাহিদামতো যৌতুক না পেয়ে একপর্যায়ে স্বামী স্বপন শেখ প্রায় স্ত্রী ইলমাকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করতো। এক পর্যায়ে সোমবার সকাল ৭টায় ইলমাকে তার স্বামী স্বপন শেখ ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা করার উদ্দেশ্যে হাত পা বেঁধে বেধড়ক মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে।
গতকাল থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী’র পিতা মোঃ ইকরামুজ্জামান ইয়ার মোল্লা।
মামলায় স্বপন শেখের পিতা, মাতাসহ পাঁচ জনকে আসামি করা হইছে।
মামলার বাদী মোঃ ইকরামুজ্জামান ইয়ার মোল্যা (৫৪) বলেন, যৌতুকের আরও টাকা না পেয়ে স্বপন শেখ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বপন শেখ ও তার পরিবারের লোকজন আমার মেয়ে কে পিটিয়ে ও গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করেছে, আমি এর সঠিক বিচার চাই।
ইলমা’র মা সিপুর বেগম (৪৫) বলেন, সাড়ে ৪ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছি। আরও এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তার স্বামী স্বপন শেখ সবসময় মারধর করে।