সাভারে শঙ্খনাদ-উলুধ্বনি, ঢাকের বাদ্যি ও সিঁদুর খেলার আচারে আজ রোববার দেবী দুর্গাকে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় নির্বিঘ্নে বিদায় দিলেন ভক্তরা।
বছর ঘুরে অন্নপূর্ণার আগমনে দেশের মন্দির-মণ্ডপে উৎসব আর আনন্দের যে রেশ ছড়িয়েছিল গত কয়েকদিন; দশমী তিথিতে তাকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হল সেটির। আগামী বছরের অপেক্ষায় থেকে দুর্গতিনাশিনী দেবীকে দেবালয়ে বিদায় জানালেন ভুবনের বাসিন্দারা।
রোববার বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাভারের বিভিন্ন এলাকায় বর্ণিল শোভাযাত্রায় দেবীদুর্গাকে নিয়ে গিয়ে ভক্তরা বংশী, ধলেম্বরী, তুরাগসহ বিভিন্ন নদীতে বিদায় দেন। এবার সাভার ও আশুলিয়ায় ১৯১টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব এলাকায় দুর্গা পূজা সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। শুরু থেকে মণ্ডপগুলোতে প্রশাসনের কঠোর উপস্থিতি ও কড়া নজরদারি ছিল। সাভারের কোথাও কোন অপ্রীতিকর খবর পাওয়া যায়নি।
ধুনচি নাচ, ঢাকের বাদ্যে নেচে-গেয়ে সাভারের বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় নদীর তীরে। বিভিন্ন এলাকার পূজা মণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে।শারদীয় দুর্গোৎসবে বিজয়া দশমীর দিনটি ভক্তদের কাছে একদিকে যেমন উৎসবের, তেমনি বেদনারও। দোলায় চেপে আগমনী এসেছিলেন মর্ত্যলোকে, আর ঘোটকে চড়ে দেবী ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে।দুর্গোৎসবে এবার তিথির কারণে নবমীর দিনই বিহিত পূজা এবং ‘দর্পণ বিসর্জন’ হলেও, রোববার দশমীর দিন সিঁদুর খেলা, দুর্গাকে মিষ্টি মুখ করানো এবং প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রার আয়োজন রাখা হয়।হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
মহালয়ার মধ্যদিয়ে ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।
মাঝে বৃহস্পতিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনে হয় মহাসপ্তমী। পরদিন শুক্রবার সকালে কুমারী পূজার পাশাপাশি মহাঅষ্টমীর বিহিত পূজা এবং সন্ধিপূজা হয়। শনিবার নবমী এবং দশমীর বিহিত পূজার পাশাপাশি শাস্ত্রীয় মতে ‘দর্পন বিসর্জন’ করা হয়। শাস্ত্র মতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে সপরিবারে মর্ত্যলোকে এসেছেন দোলায় চড়ে, ফিরে যাচ্ছেন ঘোড়ায়।বাঙালি হিন্দুদের মতে, দেবী দুর্গা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী। একই সঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’, ‘শক্তিরূপেণ’।