আজ ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা মুক্ত দিবস: স্মৃতিতে বিজয়ের উজ্জ্বল ইতিহাস
রেজুয়ান হাসান জয়, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: নেত্রকোনা, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা জেলা আজকের দিনে পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে শত্রুমুক্ত হয় এই পবিত্র ভূমি। সেদিনের স্মৃতি বিজড়িত ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে জেলার অসংখ্য বধ্যভূমি, যুদ্ধক্ষেত্র, এবং বীরদের রক্তমাখা মাটি। এই দিনে ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে জেলা শহরে আক্রমণ করেন। শহরের উত্তরের দিক থেকে প্রবেশ করে দক্ষিণের কৃষি ফার্ম এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের মুহূর্তে শহীদ হন তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা—আব্দুল জব্বার (আবু খাঁ), আব্দুর রশীদ, এবং আবু সিদ্দিক আহম্মেদ (সাত্তার)। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নেত্রকোনা শহর ও আশপাশের এলাকাগুলো পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়। শহরে প্রবেশের পর ২৫ এপ্রিল, নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ডা. মিহির সেন, তার ভাই সিদ্ধার্থ সেন এবং বাড়ির কাজের লোক করুণাকে।
তাদের পিতা হেম সেন এবং কাকা অখিল সেনকেও হত্যা করে রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী। সাতপাই এলাকায় অবস্থিত বর্তমান নেত্রকোনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (তৎকালীন ভোকেশনাল) ব্যবহার করা হয় তাদের নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড পরিচালনার ঘাঁটি হিসেবে। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও জেলা শহরের ১৭টি বধ্যভূমির মধ্যে বেশিরভাগ স্থানই অরক্ষিত এবং স্মৃতিফলকবিহীন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরসূরিরা। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহীন উদ্দীন আহমেদ (ভিপি শাহীন) বলেন, “নেত্রকোনার ১৭টি বধ্যভূমি রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে প্রত্যেকটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানাই। এগুলো আমাদের গৌরবের ইতিহাস।” বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ জেলা শাখার সভাপতি, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, “মুক্ত দিবসের এই দিনে আমাদের দাবি, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের চূড়ান্ত বিচারের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হোক। একই সঙ্গে আল-বদর, আল-শামস এবং রাজাকারদের উত্তরসূরিদের সমাজ থেকে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।” আজকের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে নেত্রকোনার সর্বস্তরের মানুষ বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন।